ফেসবুক মার্কেটিং কী? জেনে নিন ফেইসবুক মার্কেটিং -এর আদ্যোপান্ত



 

লকডাউনে কী করে সময় কাটানো যায় তা ভাবতে ভাবতেই সুগন্ধি মোমবাতির একটা ছোটখাটো ব্যবসা নামিয়ে ফেলে প্রপা। প্রথম প্রথম দুই-একটা অর্ডার আসলেও ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা নিচের দিকে যেতে থাকে৷ অথচ তারই বান্ধবী পৃথার পোস্টারের ব্যবসা বেশ রমরমা। কীভাবে পৃথার এই ছোট বিজনেস বড় বড় সব প্রতিযোগীদের হারিয়ে এখনো অনলাইন মার্কেটে টিকে আছে প্রপা তা জানতে চাইলে পৃথা দুষ্টু হাসি হেসে বলে, “সবই ফেইসবুক মার্কেটিং -এর কামাল!” আপনি যদি আপনার ব্যবসা অথবা যেকোনো কাজকে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান, তাহলে ফেইসবুক মার্কেটিং -এর কোনো জুড়ি নেই।

এই মার্কেটিং ব্যবস্থায় পেইড বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্র‍্যান্ডকে প্রমোট কর‍তে পারবেন এবং অধিক পরিমাণ পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত কর‍তে পারবেন। তাহলে চলে যাওয়া যাক আজকের মূল আলোচনায়: ফেসবুক মার্কেটিং কি?

ফেসবুক মার্কেটিং কি

ফেসবুক মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনাকে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অবগত করতে সাহায্য করে।ফেসবুক মার্কেটিং ব্যবসার জন্য বর্তমান ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে এবং পেইজ ভিজিটরদের আগ্রহ ধরে রাখতে তাদের সাথে একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করাই হল এর প্রধান কাজ, যাতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ সেই পণ্য বা সাইট সম্পর্কে জানতে পারে।

 

প্রতিদিন প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষ একবার হলেও ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। আর প্রতিমাসে এই সংখ্যাটা যেয়ে দাঁড়ায় ২.৩ বিলিয়নে। সেখানে প্রায় ৭ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় কোম্পানি এই বিশাল দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে। এই সংখ্যাগুলো দেখেই বুঝা যায় ফেসবুক মার্কেটিং কি পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকে, ফেসবুক ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেসে পরিণত হয়েছে এবং ব্যবসা প্রচারের জন্য সবচেয়ে নির্ভরশীল স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আপনি চাইলেই লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, চাকরি বা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে ফেসবুকের মাইক্রো-টার্গেটিং বৈশিষ্ট্যগুলো কাজে লাগিয়ে সঠিক টার্গেট ভিজিটরদের কাছে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছা দিতে পাড়েন।

ফেইসবুক মার্কেটিং

ফেইসবুক মার্কেটিং -এর সুবিধা:

  • সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু:

আপনি ইতোমধ্যেই হয়তো জেনে থাকবেন যে অডিয়েন্স সম্পর্কে গভীরভাবে রিসার্চ করার অনুমতি ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের দিয়ে থাকে।

ডেমোগ্রাফিক টার্গেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট আয়, শিক্ষার স্তর, জীবনের ঘটনা, সম্পর্কের স্থিতি বা চাকরিসহ যেকোনো ধরনের অডিয়েন্স নির্বাচন করতে পারবেন। এমনকি আপনি গ্রাহকদের তাদের পছন্দের বিনোদন, খেলাধুলা, শখ ও কেনাকাটা করার অভ্যাসের মতো আগ্রহগুলো থেকেও তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন।

  • ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি:

এই প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আপনি অডিয়েন্সদের সরাসরি আপনার পেইজ বা ওয়েবসাইট ভিজিট করাতে পারবেন। যারা ফেইসবুক মার্কেটিং -এর ফলে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে, তারা অর্গানিক ইউজারদের থেকে বেশি জেনেই এখানে আসবেন কারণ তারা আপনার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই পণ্য সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন। 

তাই তাদের মনে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি। সেজন্য আপনার পণ্য সম্পর্কে আরও জানতে আপনার ফলোয়ারদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করুন৷ এছাড়াও, যে ওয়েবসাইটটি লিঙ্ক করবেন সেখানে যদি কোনো ছবি দেওয়া থাকে, তাহলে ফেসবুক তা দিয়েই একটা বড় কভার ফটো তৈরি করে নেয়। তাই আপনার ওয়েবসাইটের হোম পেইজ অথবা যেই পেইজটা লিংক করবেন সেখানে একটা আকর্ষণীয় ছবি ব্যবহার করুন। এটি অনেক ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক বাড়াতে সাহায্য করবে।

  • বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট:

বর্তমানে ফেসবুক অ্যাড হলো ডিজিটাল মার্কেটিং -এর সেরা ও সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র। খুব কম খরচে টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিনন্দন অ্যাড তৈরি করা। আর ফেইসবুক মার্কেটিং -এ পাবেন ইমেজ, ক্যারোজেল, পোল, ভিডিও, স্লাইডশোর মতন হরেকরকম বিজ্ঞাপন ফরম্যাট। 

ফেইসবুক মার্কেটিং

  • গ্রাহকদের সমর্থন:

যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার কাজ হচ্ছে পণ্য বিক্রয়ের সময়, বিক্রয়ের আগে ও পরে কাস্টমারকে সহযোগিতা করা। কাস্টমার আপনার কাছ থেকে একবার কিছু কিনে নিলেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না বরং সবসময় অনলাইনে কানেকটেড থাকতে হবে। কারণ আপনি চাইবেন আপনার পণ্য আরো বেশী এবং বার বার বিক্রি করতে। আর সেজন্যই কাস্টমারের সাথে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। 

ফেসবুকের ক্রিয়েটর স্টুডিওতে যেয়ে অটোমেটেড রেস্পন্স অপশন থেকে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে না থাকার পরেও গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। তাছাড়া চ্যাটবট তৈরি করেও ব্যবহারকারীদের নিয়মিত করা প্রশ্নগুলোর উপর ভিত্তি করে আগেই এর উত্তর তৈরি করে রাখতে পারেন। ধরা যাক আপনি মূল্য, ডেলিভারি চার্জ, পেমেন্ট অপশন ইত্যাদি কি-ওয়ার্ড দিয়ে বেশ কিছু উত্তর সাজালেন৷

গ্রাহকদের প্রশ্নগুলোর মধ্যে যদি এই কি-ওয়ার্ডগুলো থেকে তাহলে অটোমেটিক তাদের প্রশ্নের উত্তর সেন্ড হবে। আপনার চ্যাটবট আসল কথোপকথন অনুকরণ করেই গ্রাহকের সাথে কথা বলবে। ফলস্বরূপ, আপনার কাজ অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনি আপনার ব্যবসার অন্যান্য দিকগুলোয় মনোযোগ দিতে পারবেন।

ফেইসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?

ফেইসবুক মার্কেটিং করার জন্য কিন্তু খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। সবার প্রথমে দরকার একটা ফেসবুক পেইজ। চাইলে আপনি নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকেও কাজ করতে পারেন, তবে বিজনেস পেইজ -এর সুবিধাগুলো আপনি পাবেন না।

ফ্রি ও পেইড, এই দুই ধরনের ফেইসবুক মার্কেটিং রয়েছে। আপনি আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী যেকোনো ফেইসবুক মার্কেটিং প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন।

ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং:

ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং -এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ফরম্যাট ব্যবহার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারেন। একদম বিনামূল্যে এই মার্কেটিং করার কাজ কিন্তু খুবই সহজ। প্রথমেই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ধরন অনুযায়ী একটি ফেইসবুক পেইজ খুলে নিবেন। এরপর আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো ও বর্ণনা দিয়ে পেইজটাকে সাজিয়ে নিন। পেইজ সেটাপ শেষে যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, তা আকর্ষণীয়ভাবে আপনার পোস্টে তুলে ধরুন। এরপর পরিচিত সবাইকে আপনার পেইজ ফলো করার জন্য ইনভাইটেশন পাঠাতে পারেন। এরপর যেই পোস্টটা দিয়েছেন তা নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। চাইলে বন্ধুদেরও শেয়ার করতে বলতে পারেন। এভাবে কিন্তু কোনো অর্থ ছাড়াই অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে প্রচারণা চালানো সম্ভব৷ এর পাশাপাশি আপনার সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপে যুক্ত হয়ে সেখানেও প্রচারণা চালাতে পারেন। আরো কিছু ফ্রি মার্কেটিং আইডিয়া:

  • লাইভ ভিডিও এবং ইভেন্ট তৈরি করা।
  • সার্ভিসের সাথে মানানসই ওয়েবিনার চালু।
  • ইন্ডাস্ট্রি বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যাওয়া।
  • সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেস্ট ও গিভ্যাওয়ের আয়োজন করা।
  • কাস্টমার রেফারেল প্রোগ্রাম চালু।

পেইড ফেইসবুক মার্কেটিং:

অর্থের বিনিময়ে পেইজ বুস্ট করে নিজের টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে খুব দ্রুত পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে পেইড ফেইসবুক মার্কেটিং করা হয়।

এই মার্কেটিং এ আপনার পোস্টের উপরেই স্পন্সরড লেখা থাকবে। একটা সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই পেইড মার্কেটিং চালালেও, আজকাল ছোট-বড় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই মার্কেটিং ব্যবহার করে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে নিজেদের পণ্য ও সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারছেন। এর সুবিধা হলো আপনি অঞ্চল, লিঙ্গ বা বয়সভেদে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে পারবেন। যেমন আপনি চান মিরপুরের ২০ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নারী যেন আপনার পোস্টটি দেখতে পান। এই কাজটা ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং দিয়ে করা না গেলেও, পেইড মার্কেটিং দিয়ে খুব সহজেই করতে পারবেন। ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে পেইজ এবং পোস্ট নির্ধারিত গ্রাহকের কাছে ফেইসবুকে উপস্থাপন করা যায়।

ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং বনাম পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

ফেসবুকের অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো, এতে কিন্তু আপনি আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিসেরও মার্কেটিং করতে পারবেন। অর্গানিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার কোনো বাড়তি খরচেরও প্রয়োজন নেই। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও ভালোভাবে ব্যবহার করলে আপনার পোস্টও সামনের সারিতে র‍্যাংক করানো সম্ভব৷ কারণ আপনার পোস্টে যদি সঠিক কিওয়ার্ড ও কাস্টমারদের করা সকল প্রশ্নের উত্তর থাকে, তাহলে আপনি অর্গানিকভাবেই ভালো মার্কেটিং করতে পারবেন।

আমরা আগেই জেনে নিয়েছি যে ফেসবুক মার্কেটিং এর মধ্যে রয়েছে ফ্রি ও পেইড মার্কেটিং। দুটোই ভালো, তবে ছোট ব্যবসার জন্য ফ্রি এবং বড় কোনো অর্গানাইজেশনের মার্কেটিং এর জন্য পেইড সার্ভিসটা ব্যবহার করা উচিত। পেইড ফেসবুক মার্কেটিং পোস্টগুলোর উপরেই ”Sponsored” লেখা থাকে। আর এইটা অহরহই আপনি আপনার নিউজফিডে দেখতে পারবেন। ফ্রি মার্কেটিং এরও ভালো কার্যক্ষমতা রয়েছে, তবে পেইডের মতো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। তবে অন্যান্য সব জিনিসের মতোই এই দুটো মার্কেটিং এরও বেশকিছু ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। কী সেগুলো? চলুন জেনে আসা যাক!

ফ্রি ফেসবুক মার্কের্টিং

সুবিধা

অসুবিধা

ব্র‍্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করে। অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমে ইউজার টার্গেট করতে পারবেন না।
আপনাত পোস্ট অর্গানিকভাবে যত আকর্ষণীয় হবে, আপনার ফলোয়াররা আপনাকে তত সহজে মনে রাখবেন। আপনার পোস্ট দেখার জন্য ইউজারদের সবসময় আপনাকে ফলো করতে হবে।
যেসব জায়গায় পেইড মার্কেটিং পৌঁছায় না, সেসব ফ্রি মার্কেটিং পৌঁছে যাবে। অনেকসময় শুধু ফলো করলেও আপনার পোস্ট ইউজারদের সামনে নাও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বারবার পেইজের নাম সার্চ দিয়ে দেখতে হবে।
অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমে কাস্টমারদের সাথে কথাবার্তা শুরু করতে পারবেন। নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষকে টার্গেট করতে পারবেন না।

পেইড ফেসবুক মার্কের্টিং

সুবিধা

অসুবিধা

নানান ফরম্যাটের পোস্ট নির্বাচন করতে পারবেন। উদ্দেশ্য মতো কাজ না করলে টাকা বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউজার টার্গেট করে নানা ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে পারবেন। অ্যানালাইটিকসের পেছনে প্রচুর সময় দিতে হবে।
বাজেট অনুসারে আপনার সেল বাড়াতে পারবেন। কনভার্সন রেট কমে যেতে পারে।
রেভিনিউ বৃদ্ধি করতে পারবেন। সবসময় মনমতো রিচ নাও আসতে পারে।

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং -এর বিভিন্ন কৌশল

  • ইমেইজ অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং কি

ইমেইজ অ্যাড সহজবোধ্য এবং আকর্ষণীয় হতে হবে। আপনি যদি ফেসবুক মার্কেটিং সেক্টরে একদমই নতুন হোন, তাহলে ইমেইজ মার্কেটিং দিয়ে শুরু করা আপনার জন্য সহজ হবে। আর মাত্র কয়েক ক্লিকে পোস্ট বুস্ট করলে তো অর্ধেক কাজ হয়েই গেল৷ 

ভিডিও অ্যাড:

ভিডিও অ্যাডের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কাজ বা ডেমো দেখাতে পারেন। এই অ্যাড ইউজারদের নিউজফিড এবং স্টোরিতে দেখা যাবে। এটা যে ফিল্ম ফুটেজই হতে হবে, তা কিন্তু না। চাইলে টুকটাক অ্যানিমেশনও ব্যবহার করতে পারেন।

  • পোল অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং কি

এই ধরনের ফরম্যাট শুধু ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপেই পাওয়া যাবে। এটা একধরনের ইন্ট্যার‍্যাক্টিভ পোস্ট। এখানে দুই বা ততোধিক অপশন নির্বাচন করার মাধ্যমে কাস্টমারদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানা যায়। ভোট শেষে কোন অপশন মানুষ বেশি সিলেক্ট করেছেন তাও দেখা যাবে।

  • ক্যারোসেল অ্যাড:

ফেইসবুক মার্কেটিং

ক্যারোসেল অ্যাডে আপনি সর্বোচ্চ ১০টি ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে নিজের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারবেন। এই ফরম্যাট ব্যবহারের মাধ্যমে একটি প্রোডাক্টের সুবিধা হাইলাইট করতে পারবেন, অথবা আলাদা আলাদা প্রোডাক্টের কাজ সম্পর্কেও পোস্ট করতে পারবেন। প্রতিটা ছবি বা ভিডিওতে “shop now” এর মতো আলাদা আলাদা লিংকও যুক্ত করা যাবে।

  • স্লাইডশো অ্যাড:

ফেইসবুক মার্কেটিং

স্লাইডশো এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ছবি, টেক্সট বা ভিডিও ক্লিপসের মাধ্যমে শর্ট ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। স্লাইডশো অ্যাড বানাতে আপনাকে অন্যান্য ভিডিওর চেয়ে পাঁচগুণ কম সময় লাগবে। চাইলে আবহসংগীতও ব্যবহার করতে পারেন।

  • কালেকশন অ্যাড:

ফেইসবুক মার্কেটিং

এই পেইড অ্যাড কেবল মোবাইল ফোনেই দেখা সম্ভব। এটায় আপনার পাঁচটি ভিডিও বা ছবি যুক্ত করে চটজলদি ক্লিক করার মতো অ্যাড তৈরি করে ফেলতে পারেন। এই অ্যাডের মাধ্যমে কাস্টমাররা খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্টটা কিনতে পারবেন।

  • লিড অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং

এটাও শুধু মোবাইল ডিভাইসেই দেখা যায়। এই অ্যাডের মাধ্যমে ঝামেলা ছাড়াই আপনি ইউজারদের কন্টাক্ট ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন! এই পরিষেবা মূলত নিউজলেটার সাবস্ক্রিপশন, কোনো ট্রায়ালের জন্য সাইন ইন করা এবং টেস্ট ড্রাইভের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • ডায়নামিক অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং

ডায়নামিক অ্যাড কাস্টমারদের পছন্দনীয় প্রোডাক্ট তাদের নিউজফিডে শো করবে। মনে করুন আপনি কোনো একটা ওয়েবসাইটে যেয়ে বেশ কিছু জিনিস কেনার জন্য সিলেক্ট করলেন। কিন্তু অর্ডার প্লেস না করেই আপনি ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে আসলেন। তখন ডায়নামিক অ্যাড সেই পণ্যের পোস্টগুলো আপনার নিউজফিডে দেখাতে থাকবে। এতে করে আপনি আবারও ওই পণ্যগুলো কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ হবেন। অর্থাৎ এর কাজই হলো পোটেনশিয়াল কাস্টমারদের প্রোডাক্টটি কেনার জন্য উৎসাহিত করা।

  • মেসেঞ্জার অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং

মেসেঞ্জার অ্যাডের মাধ্যমে আপনি প্রায় ১.৩ বিলিয়ন অ্যাক্টিভ মেসেঞ্জার ইউজারকে রিচ করতে পারবেন। বিজ্ঞাপনের সাথে click-to-Messenger” অপশন যুক্ত করে দিলে সরাসরি আপনার পেইজে মেসেজ চলে যাবে এবং আপনি সেখানেই কাস্টমারের সাথে কথা বলতে পারবেন।

  • স্টোরি অ্যাড:

ফেসবুক মার্কেটিং

স্টোরি অ্যাড শুধু মোবাইল ফোনেই ভালোমতো দেখা যাবে কারণ তা ফুলস্ক্রিন জুড়ে থাকবে। আজকাল এই ধরনের অ্যাড খুবই জনপ্রিয়।

কেন শিখবো ফেইসবুক মার্কেটিং:

নতুন গ্রাহক অর্জন থেকে শুরু করে আরো ভালো ব্র্যান্ড সচেতনতা গড়ে তোলা পর্যন্ত ফেসবুক মার্কেটিং আজকাল অনেক ছোট ব্যবসাকে অনলাইনে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কেন আপনি ফেইসবুক মার্কেটিং শিখবেন তা সম্পর্কে আরো জানতে চান? চলুন তাহলে, জেনে আসা যাক!

  • আপনার গ্রাহকরা তাদের দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ফেসবুকে ব্যয় করেন। 
  • টার্গেটেড অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ফলপ্রসূ প্ল্যাটফর্ম। 
  • কম খরচে অ্যাড দেওয়া যায়।
  • এটি দ্রুততার সাথে ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ায় ও বাজেটবান্ধব।
  • ওয়েবসাইটের ট্রাফিক, আয়, বিক্রয় এবং লিড বাড়ায়।
  • ওয়েবসাইটের ভিজিটর ও ট্রাফিক বাড়ায়।
  • গ্রাহকদের ইমেইল তালিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
  • ব্লগ ট্রাফিক বৃদ্ধি করে এসইও র‌্যাঙ্কিং বাড়াতে পারে।
  • অর্গানিক মার্কেটিং -এর চেয়ে বেশী ভালো কাজ করে। 
  • প্রোডাক্টটাকে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে, তত বেশি সেল জেনারেট করা যাবে।

বিগিনারদের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং টিপস: 

আজকাল সবাই নিজেদের সার্ভিস প্রচারণার জন্য এই ফেইসবুক মার্কেটিং এর দিকে ঝুঁকছেন। অল্পকিছু বিষয় মাথায় রাখলেই আপনি খুব সহজেই মার্কেটিং হ্যাকগুলো শিখে নিতে পারবেন!

  • সঠিক সময় নির্বাচন করুন:

আমরা সবাই কিন্তু দিনের ২৪ ঘন্টা ফেইসবুকে কাটাই না। তেমনি আপনার অডিয়েন্সরাও কাটাবেন না। তাই প্রথমেই খুঁজে বের করুন কোন সময় মানুষ বেশিক্ষণ ফেইসবুকে থাকেন। আপনি নিজের বিগত পোস্টগুলো অ্যানালাইসিস করেও যেই সময়টায় মানুষ বেশি অনলাইনে অ্যাক্টিভ থাকেন তা খুঁজে বের করতে পারেন। চাইলে পিক টাইম ও নন-পিক টাইম উভয় সময়েই পোস্ট দিয়ে কেমন সাড়া পান তা যাচাই করে নিতে পারেন।

  • অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফেইসবুক পেইজের প্রচার:

খালি পোস্ট দিয়েই হাত গুটিয়ে বসে থাকা চলবে না। অন্যান্য চ্যানেলেও নিজের কন্টেন্টগুলো প্রমোট করুন। পেইজে ট্র‍্যাফিক আনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন যাতে পোটেনশিয়াল কাস্টমাররা আপনার পেইজ সম্পর্কে জানতে পারেন। আপনি ইমেইল মার্কেটিং করে থাকেন তাহলে প্রতিটা ক্যাম্পেইনে একটা ফেইসবুক বাটন যুক্ত করে দিতে পারেন। এতে করে ইউজাররা খুব সহজেই লিংকে ক্লিক করে সরাসরি পোস্ট দেখতে পারবেন।

আপনি ইনস্টাগ্রাম ইউজার হলে ফেইসবুক পেইজ লিংক আপনার বায়োতে যুক্ত করতে পারেন। আপনার কোনো ব্লগ থাকলে সেখানেও ফেইসবুক লিংকটা দিয়ে দিতে পারেন।

  • সঠিক URL এর ব্যবহার:

এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মনে না হলেও, URL পার্শিয়াল মার্কেটিং হিসেবে কাজ করে। আপনার URL এ যদি ব্র‍্যান্ড নেমটা দেওয়া থাকে তাহলে তা সহজেই ইউজারদের চোখে পড়ে। আপনি অন্য কোনো মাধ্যমে এই লিংকটা শেয়ার করলে মানুষজন সহজেই আপনাকে মনে রাখতে পারবেন। আর এইটা প্রফেশনালও দেখাবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার URL এ যদি সঠিক কিওয়ার্ড থাকে, তাহলে এইটা এসইও স্ট্র‍্যাটেজিও বুস্ট করবে।

  •  সিটিএ (CTA) বাটন যুক্ত করুন:

কল টু অ্যাকশন (সিটিএ) আপনার মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই একটা জিনিস আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি হওয়া এবং না হওয়ার মধ্যে পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। এটি মূলত আপনার বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়ার অথবা ওয়েব পেইজের অংশ যা আপনার অডিয়েন্সকে পরবর্তীতে ধাপ সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা করে। এই টেকনিকের মাধ্যমে আপনি কনভার্সন বাড়াতে পারবেন, এনগেজমেন্ট বুস্ট করতে পারবেন এবং যেকোনো পেইজের ট্র‍্যাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনার পেইজের মূল উদ্দেশ্য মাথায় রেখে সঠিক সিটিএ নির্বাচন করুন। যেমন: “Contact Us,” “Sign up,” “Book now,” “Shop now,” “Follow,” “Call now,” ইত্যাদি। সিটিএ যুক্ত করার জন্য কভার পেইজের নিচে “+Add a Button” এ ক্লিক করুন।

  • ফেইসবুক মেসেঞ্জার বটের মাধ্যমে কাস্টমার সাপোর্ট 

আপনি হয়তো সবসময় অনলাইনে থাকবেন না। অথবা কোনো সমস্যার কারণে হয়তো টানা কয়েক ঘন্টা পেইজের মেসেজ চেক করেননি। এখন আপনি কি আপনার কাস্টমারদের এতক্ষণ অপেক্ষা করাবেন? যাতে কাস্টমারদের প্রশ্নের উত্তরের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়, সেজন্য রয়েছে ফেইসবুক মেসেঞ্জার বট। এটা হলো কথা বলতে পারে এরকম একধরনের চ্যাট ইন্টারফেস, যেখানে আগে থেকেই কাস্টমাররা জিজ্ঞেস করতে পারেন এমন তথ্য দেওয়া থাকে। আপনি খুব সহজেই এর মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান, বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয়া ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। মনে হবে আপনি একজন মানুষের সাথেই কথা বলছেন! আসলে কিন্তু তা নয়! এটার জন্য আপনাকে শুধু কিওয়ার্ড অনুসারে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে রাখতে হবে। বাকি কাজটুকু বট নিজেই করে নিবে।

  • ফেইসবুক পিক্সেল ব্যবহার করুন

এই অ্যানালাইটিকাল টুলের মাধ্যমে আপনি ভিজিটরদের ইনসাইট অ্যাক্টিভিটিগুলো দেখতে পারবেন। এর পাশাপাশি এই ভিজিটররা আমাদের ওয়েবসাইটে এসে ঠিক কী করছেন, কোন পণ্যটি বেশি পছন্দ করছে এবং কোন বয়সী ভোক্তা কোন পণ্য ক্রয় করছেন- এমন বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। এর সাহায্যে ভবিষ্যৎ ক্যাম্পেইনের জন্য টার্গেটেড অ্যাডও বানানো সম্ভব। আপনার অ্যাডের কর্মদক্ষতাও ফেইসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে পরিমাপ করতে পারবেন। ইউজাররা কোনো কিছু কেনার পর এটা অটোমেটিক্যালি রিপোর্ট করে দিবে।